আমি

 

 

আমি

 

সমস্ত সবুজে চোখ ভিজিয়ে নিয়েছি

রামধনু ফুলকে দিয়েছি সৌন্দর্য্য বোধ

আকাশের সীমানায় উড়িয়ে দিলাম মনঘুড়িটা

সাত সাগর তেরো নদীর জলে

ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছি সর্বস্ব

বিন্দু বিন্দু মাটির আঘ্রাণে আমার শিহরণ

শিকড় ছড়িয়েছে দ্রুত

হৃদয়ের সব কথায় বাতাস হল পুলকিত

বৈশাখী সমীরণে তার স্নিগ্ধতা

সকালের তরতাজা রোদ আমার প্রেমের উষ্ণতায়

সোনালী হয়ে দুয়ারে দুয়ারে

সমস্ত গোধুলির আলো

আমার মুগ্ধতা নিয়ে সন্ধ্যা হয়ে নামছে দেখো

তোমার জানলায়

আজ রাতে সমস্ত রজনীগন্ধা আমার কথা বলবে

তোমার শিয়রে

আমার ইচ্ছেডানা আলোকবর্ষ পাড়ি দিয়ে

যে নীহারিকার জন্ম দেবে অন্য ভূবনে

সেখানেও তুমি

পাখির কুজনে আমারই গল্প শুনবে

এক রাত তৃপ্তির ভোরে

 

(০৭/০৭/১২)

আরতি

 

 

 

আরতি

 

ঝিনুক কুড়াতে হলে মনে মুক্ত থাকা চাই।

গর্ভের ভিয়েনে মায়ার সাত পাকে

আদরের রঙ হলে স্নেহ, বধু ঝিনুক কুড়োতে যেও।

 

তোমাকে দেখতে হলে জানি, গোলাপের শেষ কাঁটাখানি

মননের সন্তাপে যেন নিরবে নিভৃতে থাকে।

শত বেদনার নির্ঝরেও জমে উঠুক সে বেদনাই।

আরতি।

 

(২৩-১০-১৪)

 

আরাধনা আরতি

 

 

আরাধনা আরতি

 

জলপরী বাসনার রঙে মধ্যরাত্রির নীল সময়।

শতাব্দীর নকশায় হয়ত জোনাকি বসলে

অন্ধকার দূর হতে পারে ভেবে;

সবিতার ধ্যানে আসমুদ্রহিমাচল

অক্ষরে অক্ষরে গূন টেনে চলেছে হদয়।

এসময়ে কথা বলতে নেই।

সাতরঙা নীল আকাশ আর ঢেউ ভাঙ্গা

সামুদ্রিক উচ্ছ্বাসের আদরের মত

আমাদের পূর্বরাগ।

শতদল পদ্মের মতো বিকশিত হলে

কবিতার জন্ম হয়।

শিশির ভেজা পাপড়ির সুবাসে

গুনে গুনে ভালোবাসা ধরে রাখা গেলে

যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সমস্ত কামানের মুখে বারুদ নয়।

প্রীতিভোজের নিমন্ত্রণ পাঠানো যাবে একদিন।

মানুষের শিকড়ে মৃত্যুর বীজগুলো

মহাকাব্যে আচমন করলে বিবেকের,

ধর্মগ্রন্থের পাতাজুড়ে স্বর্গের জাল বোনে দেখেছি।

তবু আমি সে সব নকশা ছেড়ে

জলপরী সঙ্গমে মেতেছি।

 

(১৪/০৫/১৩)

 

আরোগ্যহীন বসন্ত

 

 

আরোগ্যহীন বসন্ত

 

পড়ন্ত দিগন্তে সূর্য্যডোবা ব্যালকনিতে

নৈঋতের অভিবাদনে হাত রেখেছি বাড়িয়ে।

 

খণ্ড মেঘের নির্ভাঁজ শান্তি চতুর্দিকে।

নিমেষহারা অপলক অনুভব দিলো নাড়িয়ে।

 

বহুরূপী গোধূলীলগ্নে

উদ্ধত বুকের কারুকাজ দুলিয়ে তুমি দাঁড়ালে।

 

অহর্নিশ উষ্ণ প্রস্রবণে

উর্বশী নৃত্যের ঝর্ণায় এদিকে অধর বাড়ালে।

 

খণ্ডিত প্রেমের দূর্ভাবনায়

আরোগ্যহীন বসন্তের  তাড়নায় বিব্রত স্বভাবতঃ।

 

নিরুদ্দেশের পথিক। স্বপ্নমগ্ন স্রোতস্বীনী

তোমার অধরে হইনি তবু অবনত।

 

হৃদয়ের গলি-ঘুঁজির ঘায়ে বারেবারে

কানাগলি হানা দিয়ে গেছে মেয়ে।

 

জগদ্দল পাথরের স্থিতি হাড়হিম শিহরণ

তাই ওঠে নামে শিরদাঁড়া বেয়ে।

 

(০২/১০/১২)

আর্ট

 

 

আর্ট

 

আমার পায়ের তলায়

মাঝে মধ্যে এক আধটা গুপ্ত সুরঙ্গ এসে ঠেকে।

বড়ো লোভ হয় তবু ভয় হয়।

বেরুবার দরজা আছে তো, আঁধারে।

বেরুবার দরজা কি থাকে? করে নিতে হয়।

ওটাই আর্ট।

নয়তো লক-আউট জীবন থেকে।

 

আমার ঘুমের মাঝে যে মেয়েটা হামা দেয়

কখনো সখনো

তার আঘ্রাণ নিয়ে আমি

ভালবাসার অভিধান লিখে ফেলতে পারি।

কিন্তু সে অভিধান খুলে পড়তে ভয় হয়।

ভয় তো হতেই পারে ভয় না করাটাই তো আর্ট।

নয়তো লোডশেডিং জীবনে।

 

আমার একার নীল আকাশে উড়তে উড়তে দেখি

আরও কত অচেনা আকাশ হাত বাড়িয়ে রেখেচে

সাদা পতাকা তো বাড়িয়েই দিতে পারি।

কিন্তু সে পতাকায় যে ঘূণ ধরেছে বহূদিন।

যদি কেউ ধরে ফেলে। ধরে তো ফেলবেই।

ঘূণ ঢেকে রাখাটাই তো আর্ট। নয়তো

নক আউট লাইমলাইট থেকে।

 

(০৩/০৭/১২)

 

আলগা বোতাম

 

 

আলগা বোতাম

 

সমস্ত দিন আমি বসে থাকি

পৃথিবীর ব্যালকোনিতে মন ঝুলিয়ে।

ছায়াপথের মতো বেণী দুলিয়ে

ষোড়শী অষ্টাদশীদের চলে যেতে দেখি।

লুব্ধক সন্ধ্যায় নিবিড় রাতের শিহরণে।

হেমন্তের ধান কাটা কাস্তের মতো ঘরে

তুলেছে তাদের নিজস্ব পুরুষ।

সোনালী সূর্যের মতো যৌবন মন

দেখা যায় বন্দরে নগরে

ঋতুচক্রে  ধুয়ে ধুয়ে যায়।

অন্তহীন নিরন্তর শুভ্র বিবেক

রক্তের উজানে জ্বলেনি জ্যোতিষ্কের মতো।

মানুষের ঘরবাড়ি জুড়ে

রোজকার উনানের মতো মেয়েদের শরীর,

শরীরের ওম ছাই চাপা মনের অঙ্গারে

ধিকি ধিকি জ্বলে শেষ হয়ে যায়।

শেষ রাতের নির্বাক মৌনতার মতো।

তবু আমাদের স্পন্দন যেন ব্যলকোনির মতো।

 আলগা বোতাম।

দিনরাত্রি শুশ্রূষার থেকে

ক্রমেই দূরে দূরে সরে সরে যায়।

 

(০৩/০৮/১৩)

আহ্বান

 

 

আহ্বান

 

জ্যোৎস্নার শরীর ছেয়ে

নারীর বিমুগ্ধ রূপ যেন!

জোনাকি নৃত্যের রাতে

চঞ্চল মাটির বুকে নেমেছে

ফসিলের প্রবাহ!

আবহমান মৃত্যুর মিছিলে

ভালোবাসার গোলাপ গন্ধ

যেন পান্ডুলিপির করেছে আয়োজন!

তখন শব্দের জন্য

ওষ্ঠের চুম্বনে রক্ত জমলে প্রিয়া,

আমার অধরে এসো বিনম্র সন্ধ্যায়!

 

(১৭/১০/১২)

ইতস্তত বিক্ষিপ্ত নিস্তবদ্ধ প্রশ্ন

 

 

ইতস্তত বিক্ষিপ্ত নিস্তবদ্ধ প্রশ্ন

 

(তখন)

 

নদীর মত ভালোবাসা নিয়ে

বয়ে চলেছি নারীর সঙ্গমে।

কথা নয়। প্রশ্ন নয় এখন।

সৃষ্টি মুহূর্তের এই বেদনা

আমার শরীরে হয়েছে অম্লান।

ঝিরিঝিরি অভিমানে

বৃষ্টির মত ভিজিয়েছে সে আমায়।

ভালোবাসা আকন্ঠ নেশার মতো টেনেছে ভুবন।

 

(তারপর)

 

পৃথিবীর বুকের ভেতর

সঙ্গমের রীতি রাত্রির অধরে

হারান চুম্বন যত করেছে জড়ো।

তবু কেন ক্লান্ত

যুগ অবসানে নতুন ক্লান্তি

ফিরে ফিরে চলে আসে?

সঙ্গম সমুদ্রের জলে নোনতা

হয় আমাদের হৃদয়?

 

(এখন)

 

স্পর্শের অনুভুতিগুলি

স্মৃতির দেরাজে তুলে রেখে

জড়ো করেছি প্রিয়া

ভুলের মাশুলগুলি তোমার শরীরের

এত কাছাকাছি।

হয়ত যায় না বোঝা

রাত্রির অতল গভীরে আজও দুজনে

কেন পাশাপাশি আছি।।

 

(২২/০৮/১২)

ইশারা বসে আছে নিশ্চুপে

 

 

ইশারা বসে আছে নিশ্চুপে

 

তুমি কি আমাকে আর ডাকবেনা?

ঈশ্বরের বাগানে বাতিস্তম্ভ আলো দিচ্ছে দেখ।

কত মহেঞ্জোদরো হরপ্পা হল কাক ভোরে।

পম্পেইয়ের লাভা আকাশে উড়িয়ে দিয়ে ছাই

দিনে দিনে হৃদয়ে শুকালো।

 

মানুষের হিরোশিমা সীমা ছাড়ালে লোভ

লালসা রিরংসা ক্ষোভ শতরঞ্জ চৌখোপে

ভোপালের গ্যাস এসে লাগে মুখে.....

 

ঈশ্বরের বাগানে বাতিস্তম্ভ জ্বেলে নিয়ে

কেষ্ট বিষ্টুরা সব আছে সুখে।

 

তবু তুমি একবার ডেকে দেখো।

জ্যোৎস্নার ঝিঁ ঝিঁ ডাকা রাতে.....

শরীরের প্রতি রোমকূপে ইশারা বসে আছে চুপে…..

 

বিপ্লব ক্ষণজীবি তাও পেটোয়ারা পেটো হাতে ছোটে।

পোস্টার ছিঁড়ে দিলে রোজ দেওয়ালের ওল্টানো পিঠে

ক্ষীণজীবি মরে যাবে তাও শেষবার মাথা তুলে ওঠে।

 

(১৪/০২/১২)

ঈশ্বরনন্দিনী

 

 

ঈশ্বরনন্দিনী

 

নগ্ন নির্জন চিবুকের নক্ষত্রসন্ধ্যায়

সোহাগের ডানা মেলে দিলে আদরের চুম্বন-

হয়ত জলপরী শাড়ীতে তুমিই ঈশ্বরনন্দিনী তখন।

সহস্র আগুনের ফুলকি কিশোরীর ডাগর চোখের মতোন।

ঘুমভাঙা শিশিরের মতো অমলিন নিঃশব্দ বিস্ময়ে

তোমার স্পর্শ পেতে চায়।

এক-পা দু-পা পথের সারি এগিয়ে চলেছে

জনঅরণ্যের রোজকার ভিড়ে।

এ সন্ধ্যায় তোমার পঞ্চবটি থেকে

মায়ামৃগ নয়, জলসিঁড়ি নদীর জলসাঁতার ঢেউ:

ধুয়ে দিয়ে যায় নিরুদ্ধ লক্ষ্মণরেখা সব।

বৈতরণীর পারে অমাবস্যার রাত

তখন ফুলশয্যার আয়োজনে

জোনাকি সাজিয়ে রেখেছে শতাব্দীর তানপুরায়।

সংবাদ শিরোনামে সাগরের অতল থেকে

হিমশৈলের চূড়ায় তোমার অভিযানে

রত্নগর্ভা সময় শুধু ঈশ্বরের চুম্বনের অপেক্ষায়।

 

(১১/০৯/১৩)

 

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন