পাণ্ডুলিপির আয়োজন

পাণ্ডুলিপির আয়োজন


পাণ্ডুলিপির বুনো গন্ধে গুমোট আকাশের রঙ

লেগে আছে ১৪২০র সংস্করণে কবি

নিস্তব্ধ সমস্ত শিশির নীরব দৃষ্টির প্রদীপে

অক্ষর পায়ে চলেছে

ভালোবাসার নারীর আঁতুরে

পৃথিবীর সমস্ত অন্ধকার হাতড়ে

নবজাতকের আলোয় ফেরার মতোন,

তোমার ছন্দে সুর লাগলে প্রেমের;

প্রেয়সীর মুখ পানে চেয়ে দেখো

কার্তিকের সূর্যে নবান্নের রং লেগে আছে

নালান্দার পুঁথি কাটা কীটের দংশন থেকে

পাণ্ডুলিপি রক্ষার- সরকারী কমিটির ফাইল পড়ে থাক

তোমার সোনালী ধানে নবান্নের ভোজে

নিরন্নের নিমন্ত্রণ থাক বরং

আদিম অরণ্যের বুকে

মানুষের প্রথম প্রেমের মতোন আলো হোক পাণ্ডুলিপি কবি

অক্ষর জুড়ে জরায়ুর অন্ধকার রসবতী হোক

প্রেমের প্রথম  সংলাপে আজ.......১৪২০

 

(৩০/০৫/১৩)

পাথরপ্রতিমা বুকে

পাথরপ্রতিমা বুকে


সেই মেয়ে

যার আকাশে দেখেছিলাম বাতাসের সাত রং

যার চলায় ছিল চিত্রকরের ঢং

যার চলার পথে ব্যাটা ছেলেদের সং!

সেই মেয়ে

পালতোলা নৌকার হাসিতে যাদের করে মাৎ

আলতা পায়ের নুপুরে যাদের করে কা

সেই মেয়ে, গঙ্গা জলের শাড়িতে

যাদের জাগায় রাত.

সেই মেয়ে

যখন প্রেমের সংলাপে রাত কে করে ভোর

সেই মেয়ে যখন তানপুরাটার টানে

নেশায় লাগায় ঘোর

সেই মেয়ে যখন কাজল চোখের টানে

প্রেমে খাটায় জোর.

সেই মেয়ে

সেই মেয়ে যদি সূর্য্য ওঠা ভোরে

যদি কড়া নাড়ে দ্বোরে

যদি নরম হাতের তোড়ায়

যদি তাজা গোলাপ বাড়ায়

তুমি, তুমি পাথর প্রতিমা বুকে

তুমি, তুমি দাঁড়াবে কোন মুখে?

 

(১৯৯১)

পারস্পরিক

পারস্পরিক


অলকানন্দার জলে

পরস্পর বৃষ্টিবিন্দুর ভিতর নান্দীমুখ।

তারপর শব্দের জ্যোৎস্নাকুচি

নিভৃত সংলাপে মৌনমুখর।

কৃষ্ণচতুর্দশীর শয্যা জুড়ে

আবহমান পরিব্যাপ্ত ভ্রূণালাপ।

বাকরূদ্ধ সময়সরণীর পাকদণ্ডী বেয়ে

শিবনেত্র মুহূর্ত্ত শাশ্বত স্বস্তিতে।

ক্রান্তদর্শী সিন্ধুতরঙ্গর জলবিম্বিত ঢেউমুখ,

ধ্রুবতারা রাতের মুখোমুখি।

বন্ধ্যাসকাল পেড়িয়ে সতত শ্রাবণগাঁথা সৌরভ।

যূথবদ্ধ সোহাগে পানকৌরী দিগন্ত তৃপ্ত ভাবাবেগে।

অরুণোদয়ের অনুপম সিদ্ধি জীবনচক্রের ধারাপাত।

সমস্ত জলসত্রের উৎসমুখ হয়তো বিপ্রতীপ সুখ।

আদিগন্ত সারেঙ্গীর উৎসরণে মুগ্ধ মন্থরা দূর্মুখ।

ইতিহাসস্নিগ্ধ হয়ত নয় সব আত্মজৈবনিক কালক্ষেপ।

শুধু সূর্যউদ্দীপক স্পন্দনে পারস্পরিক।

 

(০৭/০৬/১৩)

পার্থিব আলো

পার্থিব আলো


নারী নয় পুরুষ নয়। ভালোবাসার অনন্ত সময়

সমুদ্রের ঢেউয়ের মুখে চুমু দিতে দিতে ছড়িয়ে দিচ্ছে

টুকরো টুকরো উৎসাহী সকাল।

বেলফুলের খোঁপার মতো বিকেলের আঘ্রাণ।

স্বরলিপি সন্ধ্যার অনুপম অনুরাগ।

ছায়াপথের আড়ালে নিষিক্ত রাত্রির ওম।

তবু কেন নিরুৎসাহিত হতে হয়

কেবল মানুষের গল্প বুনে বুনে।

সময়ের উচ্ছিষ্ট মতবাদ ঘিরে বিপ্লবের রুট মার্চ

কামানের গোলা ভেজাতে পারেনি প্রেমে।

মসনদ জুড়ে রিপুর ভয়াবহ আরতি। দু হাত বাড়ালে

রূপালী জ্যোৎস্না নয়, শঙ্খচূড় বিষের কৌটো

দিনপঞ্জিকা লিখে রেখে যায়।

তবুও আকাশ জুড়ে নীল অতীশ দীপঙ্করের সবুজে

বুদ্ধং শরং জপে চলেছে। পৃথিবী হয়ত

প্রবীণ হলে আরও হৃদয় ডুবুরির হাতে

উজ্জ্বল হতে পারে পার্থিব আলো।

 

(১২/০১/১৩)

পার্থিব

পার্থিব


পূর্বপুরুষের সংকেতগুলো

মৃন্ময়ী সবুজে লিপিবদ্ধ আছে।

যদিও অনেক নিরুপায় রক্তের কান্না ভিজে আছে

রোজকার শিশির ভেজা কোমলতার আড়ালে।

যত সূর্য আলো নিয়ে দাঁড়িয়েছিল

সকলের স্বচ্ছন্দ হৃদয়ের কাছে

ততটাই যেন ব্যায় হয়ে গেল রণ রক্ত রিরংসার ঝাঁজে।

নোয়ার নৌকোয় মহাকাল

আশ্রয় খোঁজে হয়তো

নয়ত মহাপ্লাবনের পর ভরাডুবি ধরা আছে মরুভূমির কাছে।

প্রতিদিনের জানলায়

তবুও আমার ভুবন মাথা ঠোকে সবুজের আঘ্রাণে।

সমস্ত পূর্বপুরুষের গানে যে দুটো কলি

আজো সাথী খুঁজে চলে,

বলে,--

"বলো তুমি সুন্দর। বলো

আমি ভালোবাসি।"

আমিও আমার

শব্দ কটি দিয়ে

সে কলিতে সুর জুড়ব প্রিয়ে।

বলব- তুমি সুন্দর।

দেখ; আমি ভালোবাসিয়াছি

 

(১৪/০৭/১২)

পূর্বাভাস

পূর্বাভাস


জানি লালকার্পেটের ভিতে

ভাঙন ধরাতে সময়ের করাত শান দেয় রোজ।

তাই দেখ ২০১৩-

উন্মাদ হয়ে যাইনি এখনো।

এঁঠো শালপাতা চাটা বিমূঢ় সকাল শপিংমলের কাঁচে

প্রতিবিম্ব আঁকে প্রলাপের।

আমার সংলাপের সিঁড়ি

বেয়ে নীচে নামতে থাকে

স্লোগান বিচুর্ণ জেদ-

অবাঞ্ছিত মিছিলের শূন্য করিডোর ধরে

হেঁটে চলে যায় গোপন আঁতাত, পায়ে পায়ে।

লোকজন আসে, ভাষণে শাসনে সাইজ হয়ে

ঘরে ফেরে। রাত নড়বড়

খাটের কিনারে ভারতবর্ষের ভোর হয় লোকগণনায়।

তারপর ভোটার লিস্টে গণতন্ত্র লেখে তার নাম।

আমাদের চিরকুটে অনেক আষাঢ়ে গল্প নবান্নের চিত্রনাট্যের খসড়া নিয়ে।

এখনো শালবীথি হেমন্তের সন্ধ্যায় বন্দুকের নলে

স্বপ্ন ঝরালে

ঝড়ের অনেক পূর্বাভাস ঠিকমতো মেলানো

যেতো তাহলে। 

(০৫/০৬/১৩)

প্রজেক্ট ম্যানহাটন

প্রজেক্ট ম্যানহাটন


অগণন মানুষের মৃত্যু এসে

ইতিহাসের পাতায় জীবিত ও মৃতের স্তূপে

হৃদয় ম্লান করে দিয়ে ফিরে চলে যায়।

স্মৃতিফলকের গায়ে মানুষের নাম তবু

মৃত্যুর ব্যাথা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

অন্ধকার বিস্ময়ে স্থির নেত্রে

শেষ বারের মতো প্রতিদিন মোম জ্বালায়

অগণন মানুষের মৃত্যুর জ্বালা নিয়ে

যে শিশু আজও জন্মায়,

মানুষের ঘরবাড়ি  নিশ্চিত আরাম কেদারায়

তারও বুকে ক্ষোভ জমে যদি সকাল সন্ধ্যায়?

অনন্ত রাত্রির গর্ভে

কোনো মানবিক আলোর ভ্রূণ যদি সাঁতরায়- মাথা ঠোকে

লুম্বিনী কিংবা বেথেলহেমের বন্ধ দরজায়?

সৃজনের ব্যর্থ আরতি

আজকের ভয়াবহ সময় ছেঁচে যদি আনে ভালোবাসা।

আবার মানবিক প্রেমের প্রত্যয়।

রাত্রি কাটবে কি তবু

নাগাসাকি কিংবা অগণন হিরোশিমায়?

 

(০৬/০৮/১৩)

 

প্রতিশ্রুতি

প্রতিশ্রুতি


অপার্থিব শোকের নিরিবিলি চুম্বনে

সোনালী গ্লিসারিন ফুল ফুটলে বলো--

তোমার বিষাদ খুঁটে খুঁটে

আর্তনাদের সিগন্যালে

মানুষের প্রতিবাদ টাঙিয়ে রেখে যাবো।

জলের ভিতর ভ্রূণের গল্প থেকে ধর্মের কলে বাতাস দিতে এলে

তোমার কিংবা মানুষের অজুহাতে থিতিয়ে যেতে দিও না

অশরীরী পতাকা নাড়া।

মন্ত্রপূত গুপ্তধ্বনি যত মহাফেজখানায় যত্নে রাখা থাক।

সে সব পাতায় তোমার বিষাদ জল

থাকুক ছুঁয়ে আতসবাজীর রঙ।

তবুও যদি প্রতিশ্রুতির রাত বন্যা হয়ে তোমার ঘরে ঢোকে,

সকাল জুড়ে শুকিয়ে নিও জামা যতই পুড়ুক ঘাম ভেজা প্রত্যয়।

বৃষ্টিবিন্দু সাজিয়ে রাখি দেখ।

সময় পেলে জল কোরো ছুঁয়ে ছুঁয়ে।

মন্ত্রপূত গুপ্তধ্বনিগুলি ভাসলে জলে আমায় মনে করে

আঁচলটুকু উড়িও শেষ সুখে।

 

(০৯/০১/১৩)

প্রতীক্ষা

প্রতীক্ষা

 

এইখানে ফাঁকা রেললাইনের বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে আছি।

একপাশে টলমল নদী হাজার বছরের জল নিয়ে চলছে।

ওপারে উচুঁউচুঁ টিলার ধারে সবুজের সমারোহ।

ট্রেনের সময় হয়েছে অনেকক্ষণ।

তবু বাতাস এখনো নীরব।

মাটিতেও বাজেনি চাকার শিহরণ।

বিনম্র ধারাপাতে নিয়মিত জল সিঞ্চন করে দেখেছি

প্রেয়সীর চুম্বনে ভেজেনা সমস্ত শরীর।

দরজা বন্ধ রাতের নিশিযাপন শয্যায়

অস্থিচূর্ণ অঞ্জলি দিয়েও পথ রয়ে যায় সংকীর্ণ।

পরশপাথরের খোঁজে নারীর হৃদয়ে

আলোর পতঙ্গ হয়ে ডানা ঝরে যায় শুধু।

এইখানে সোনালী নীরব আকাশে

প্রেয়সীর মুখ এঁকে দেখেছি চোখে পলক পড়ে কিনা।

টলমল জলের হাত ধরে তুলির আঁচড়ে

রঙের মোচড় দিচ্ছি শুধু।

প্রেমের শিহরণ শোনা যেত যদি অতিদূর ট্রেনের হুইসেলে।

 

(১১/১১/১২)

প্রথম আলো

প্রথম আলো

 

এখন কেমন লাগছে বলুন।

গঙ্গার ঘাটে অস্থি বিসর্জনের রাতে

নীরার চোখে পলক পড়েনি দেখেছেন?

একা এবং কয়েক জনের ভিড়ে ধুপ আর ধূনোর আধাঁরে

নীরাকে ঠিক কেমন দেখলেন তখন।

উদোম হাওয়ায় আঁচল ওরা নারী?

আকাশের নীল সাঁতরে সাঁতরে

বাংলার শেষ সলতেতে প্রেমের আগুন জ্বেলে স্থিরনেত্র?

নাকি রিমোটে লাইভ কভারেজে লবণাক্ত শয্যায়

ডুবে যেতে যেতে স্মৃতির হালখাতা খুলে খুলে....।

জীবনের গল্পগুলোকে ঠিক যেভাবে সাজানো যায়

এক মানুষ জীবনে। ইচ্ছের ঢেঁকিতে কুটে কুটে তৃপ্তির রঙে।

সেই ভাবেই হয়ত

তবুও মানুষ নীললোহিত ঘোরে দেখে নেবে নীরাদের।

 মেট্রোর অফিসটাইম থেকে নিমতলার লাইনে।

জন অরণ্যের সীমাবদ্ধ প্রস্তুতিতে

জ্বেলে দিতে প্রথম আলো?

 

(৩০/১০/১২)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন