ব্যর্থ ম্যারাথন

 ব্যর্থ ম্যারাথন

 

সায়ন্তনী স্বপ্নের মতো পোশাকার ফাঁস গলিয়ে

নিরালম্ব মিশে গেছি ভিড়ের সকালে

কাকজঙ্ঘা নিয়তি ভ্রূ কুঁচকে কিছুক্ষণ

চোখে চোখ রেখে শেষে মুচকি হেসে

পথ করে দিয়ে গেল শেষে

বিষুবরেখার মধ্যেখানে প্রখর বৈশাখের

আদিম মধ্যাহ্নে কখন যৌবনের অবলম্বন

মক্কা মদীনা কি বেথেলহেমের আপেলে করে দেখেছি চুম্বন,

ক্ষমতার শীর্ষবিন্দুগুলি সময়ের ছিদ্র খোঁজে শুধু

বৃন্দাবন থেকে পেন্টাগন

হরপ্পা মহঞ্জোদরোই নয়, ইনকাদের পোড়া হৃদয়,

মায়া সভ্যতার ধনুকে টান দিয়ে দেখেছি

সমরবাণিজ্যের রীতি লাটিমে গুটিয়ে রেখে রাজনীতি

নারীর বাকলে পেশীর আস্ফালন ধর্মগ্রন্থ মানেনি যখন,

সায়ন্তনী স্বপ্নের যোনিতে থেমে যাক

আমাদের ব্যর্থ ম্যারাথন

 

(২৮/০৩/১৩)

 

ব্যাধি


ব্যাধি 


খড় ভেজানো আগুন দিয়ে আরতির আয়োজনে

প্রতিকৃতির উজান ঠেলে দেখেছি

বিশুদ্ধ হৃদয় পোড়ে না কখনো

তবুও দগ্ধ সময় যদি শোধনবাদী হয় তবে দহন ভালো

ভালো নয় ধিকি ধিকি জ্বলা জ্বলার সময়

উলম্ব বিশ্বাসের পাদপীঠে নিরালম্ব সামাজিক প্রীতি

যৌথ বিবৃতির মতোই হাস্যকর

তবু আনুভূমিক নগ্ন প্রত্যয় জমে ওঠে যদি

শান্তি সংহতি মিলনের একান্ত বিবরে;

তবে দানা বাঁধা সূর্য, পতাকা ফেলে

আলোকিত হতো রোজ ভোরের টেবিলে

প্রলম্বিত মিছিলের শিবিরে সনাতন মঞ্চ জুড়ে

শুধু ঝুড়ি ঝুড়ি নীলাকাশ ঝরানোর খেলা

তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিমে

শুধুই শূন্য নিয়ে শূন্য দিয়ে ছবির নিলাম

তবুও মোহনবাঁশির দুরন্ত আয়োজনে হাতে-গরম

ভোর আয়োজন করেছে রিয়্যলিটি শো

স্বাগতম ব্যানারে


(০৪/০১/১৩)

ব্যারিকেড

 ব্যারিকেড

 

সমস্ত যুদ্ধের অবস্থানে যেদিকে তাকাও সব পাতা

শাদা হয়ে গেছে। সৎকারের সময়

সব মতবাদ মতাদর্শের মুখ কালো।

 

অম্লান সূর্য্যের অভীপ্সায় জোনাকির শিয়রে বসে থেকো।

পাঁজরের নিঃশব্দ প্রহরীর আস্তিনে তুলে দাও

জ্যোৎস্নার তরবারি।

 

সাম্রাজ্যের লেলিহান শিখা মানুষের ঘুমে দখল করেছে স্বপ্ন।

চোখের পাতায় আদর দিয়ে সোহাগে;

বেনের হাতে তোমার শ্রমের সত্ব।

 

তবুও শিকড় মাটির অতলে দৃঢ় থাক।

হাতের মুঠোতে স্বাধীনতার সংশ্লেষ।

ব্যারিকেডে বাজুক কুরুক্ষেত্রের দামামা।

 

বন্ধু তুমি কি মুখের কথায় বিকোবে।

প্রচার যন্ত্রে মহাপুরুষের সাজে জল্লাদ।

ভ্রষ্ট সময় জীবন এখানে জ্বলবে।

 

হাজার বছর এখনো একটু

হাতে থাক। প্রগাঢ় বেদনা

যুগে যুগে ফল ফলবে।

ব্রহ্মকমল

ব্রহ্মকমল

 

মধ্যরাতের যোনিতে লিঙ্গের অযথা কুচকাওয়াজ শুনি

এখানে নিষিদ্ধ কোরাসে ভ্রূণের স্বপ্ন জুড়ে

ঊরুসন্ধির নৃত্য

পৃথিবীর বয়সিনী চন্দ্রকলার বিবস্ত্র আকঙ্খায়

চিত্রকরের ইজেল জুড়ে

বাৎসায়ণের ভারতবর্ষ

তবুও নক্ষত্রদোষ ছাড়েনি আমাকে

বৃশ্চিক সনদে নেই মেঘদূতের অক্ষরেখা কোনো

সময়ের বিরুদ্ধ সংঘটনে অঘটন পটিয়সীর নৃত্য

গোপন ইস্তাহারের সুড়ঙ্গ জুড়ে

কুরুক্ষেত্রের দিনলিপি

হায় প্রেম তোমার মানসসরোবর ঢুঁড়ে

পাইনি ব্রহ্মকমল একটিও

মালোবিকা সান্ন্যালের উদ্ধত আঁচলে গভীর দংশন আছে

তবুও মৃত্যুর আগে

নাভিকুণ্ডের ওম সঙ্গম তিমিরে ক্রুশবিদ্ধ হলে

হে নবজাতক, তোমার ঠিকুজী জুড়ে ব্রহ্মকমল

খুঁজে ফিরো আর এক বার.....

 

(৩১/০৫/১৩)

ভারতবর্ষ এক পা দু পা

ভারতবর্ষ এক পা দু পা

 

শিকড়ের মতো একা

শব্দের ঝর্ণায় স্নান করে

তোমার প্রতীতিতে

শাখা ছড়াবো আমি

মানুষের ঘরবাড়ি নগরের পথঘাটে

সমস্ত দুঃখ দূর্দশা ঘেঁটে

অনেক রসবতী তুমি আজ

তোমার চোখের আলো খুঁড়ে

অনাদী প্রদীপের শেষ শিখাটুকু লিখে দিও

আমার নামের এলোমেলো পরিসরে

বিংশশতক গত ঊনবিংশের কবরে

একবিংশের নতুন মহাকাব্য

লেখার ধূয়ো উঠেছে দেখো

অনেক বাক্য ওলোট পালোট করে নিতে হবে

কত শব্দ ঝেড়ে ঝুড়ে নতুন বানানে সাজবে পরিভাষা

আহেরী ভৈরবী থেকে ইমন পূরবী বাগেশ্রী হয়ে মালকোষে

ডিজিটাল সিম্ফোনীর গল্প বুনবে নতুন আশাবরী

সন্ধিচুক্তির সনদে আবহমান ইতিহাসের ঝুরঝুরে পাতা মিটমিট হাসুক

তবুও তোমার কাছে আমি দায়বদ্ধ আমার কলম

 

(২৯/১১/১২)

ভালোবাসার জংশন

ভালোবাসার জংশন

 

ভালোবাসার জংশনে দাঁড়িয়ে আছি সময়টা সকাল নয়

সান্ধ্যচুম্বনের শাটল আদরের সময় হয়ে গিয়েছে

অস্থির অধর বাতাসে ভিজিয়ে,

হাতঘড়ির অংকে হৃদয়ের উত্তাপ গলাতে ব্যস্ত

পকেট বোঝাই মেঠো কবিতার শব্দের উসখুস

বৃথাই সুরসুরি দেয় স্মৃতি

এদিকে নতুন ত্রিফলা,

আলো ছড়িয়ে চলে যাচ্ছে কালপুরুষের কোল ঘেঁষে

অরুন্ধতী নক্ষত্রের বেণী দুলানো ভঙ্গিমা নিয়ে

একে একে ভ্যানিটি ব্যাগের ভিড়

তবু সে আসেনি আজকেও কালকের মতো

কালকের ভোরের কবিতায় কাজল পড়াতে হবে তবু

ভালোবাসার জংশনে তারিখ পাল্টাবে

পাল্টাবে না আমার সময়

হাতঘড়ির অংকে যোগ বিয়োগের সংখ্যায়

ঝুলন পূর্ণিমার জ্যোৎস্না নামাবো আমি

যযাতি মন ক্লান্তি জানে কি?

ভালোবাসার জংশনে আমার

 

(৩০/০১/১৩)

ভালোবাসার স্বরলিপি

ভালোবাসার স্বরলিপি

জলের দাগে ব্যাথা লিখে দেখেছি

 টাপটুপ ইতিহাসের শিরদাঁড়া বেয়ে

 বিক্ষোভ মিছিলে বেদনাহত মৌন বাঁশির সুর

বিশুদ্ধ রাগিনীর ফ্ল্যাগ মার্চের সকালে রামধনু বৈঠক

মধ্যরাতের খতিয়ান নিলে বিবস্ত্র হয় লজ্জা

তবু লাল নীল ওড়নার সবুজ হাতছানি:

ক্লান্ত দু-তিন পেগ উসখুস-সন্ধ্যা কখনো এড়াতে পারেনি

কালপুরুষের ছায়া ধরে ধরে

অরুন্ধুতী আলোর ডাক শুনবো বলে

 কত নারীর ঠোঁটে উৎকর্ণ থেকেছি সারা রাত

ব্যস্ত যৌবনের ম্যারাথন জুড়ে আসমুদ্র হিমাচল-

পাঁজরে দাঁড়ের শব্দে ভালোবাসার ভগ্ন ইমারত

মধ্যবর্তী আবেগের দহন জুড়ে

আলিঙ্গনের ফাঁপা আওয়াজ

মেঘমল্লার নামাতে পারেনি আজও

ওদিকে ভালোবাসার স্বরলিপি জুড়ে

নিস্তব্ধ সংলাপ প্রহর গোনে

পথিকের

(২০/০৫/১৩)

 


ভালোবেসে সখী

ভালোবেসে সখী

 

ধর যদি বলেই ফেলি

তোমায় আর ভাল্লাগে না

দিনের বেলা রাতের বেলা

ধর যদি দেখেই ফেলি আমার ঘরে

তোমার গন্ধে মাছি ওরে

ধর যদি আঁতকে উঠি

তোমার ছায়ায়

লোডশেডিংএর অন্ধকারে

ধর যদি বেঁকেই বসি

থাকব না আর চলব না আর

তোমার সাথে ধর যদি আর

একটি মেয়ে উড়িয়ে আঁচল

পাল তুলে দেয় হঠাৎ করে

কিংবা যদি ভেবেই বসি

 

ঢের হয়েছে নারীর ছোঁয়া

আসল কথা আগাগোড়া

ভালোবাসার সবটা ধোঁয়া

প্রথম প্রথম প্রেমের ঘোরে

দুনিয়া ভুলে চার দেওয়ালে

তারপরেতে লোকলজ্জায়

অভ্যাসটা জিইয়ে রাখা

লোক ঠকানোর ছবি আঁকা

দরকার কি তোমার আমার,

মিথ্যে কটা ছবি আঁকার

লোক ঠকানো? জীবন মানে

অভ্যাসটা টিকিয়ে রাখা,

কাঁটাতারের মধ্যেখানে,

পরস্পরে ভুল ভাবানো মুখর গানে।

 

(১৯৯১)

 

ভোর হল দ্বোর খোলো! তনুপ্রিয়া ওঠো রে!

ভোর হল দ্বোর খোলো! তনুপ্রিয়া ওঠো রে!

 

সকাল হল জাগোরে কন্যা

জাগো একটিবার।

চক্ষু খোলো তাকিয়ে দেখ

আলোর বাহার।

 

নিশীথ রাতের মগ্ন আঁখি

স্বপ্নমাখা আঁধার

এবার কন্যা বিদায় জানাও

সময় হল যাবার।

 

ফুলের কুঁড়ি তোমার লাগি

ব্যাকুল হয়ে চায়।

তোমার হাসির পরশ তাহার

পাপড়ি যে ফোটায়।

 

পাখির গুঞ্জন গান হয় কি

না শুনলে তুমি?

তাকিয়ে দেখ তোমার চরণ-

বুক পেতে চায় ভূমি।

 

ঘাসের ডগায় শিশিরকণা

তোমার পরশ চেয়ে

দিনের সাথে লড়াই করে

সময়তরী বেয়ে।

 

নীল আকাশের শুভ্র মেঘের

আলোর মাতামাতি।

তোমার তরে সময় গোনে

সাজিয়ে স্বর্ণভাতি।

 

ঝর্ণা ঝরা নদীর জলের

ঢেউ গুনছে সাগর

তোমার তনুর পরশ পেতে

উতলা গোটা ভাদর।

 

নিজের কথা বলব কি আর?

তোমার কন্ঠসুধা

এই জীবনের মরিচিকায়

মেটায় প্রেমের ক্ষুধা।

 

(৩/৯/১২)

ভোরের যুথিকা

ভোরের যুথিকা

 

চিত্রকরের মায়াবী ইজেলে

রঙের অভিসার জুড়ে মন্দমধুর দোলা

বৃন্তস্তোনী ক্যানভাসের জমাটি আসরে

পুংকেশর ওড়ে প্রজাপতি স্মরণে

রোমাণ্টিক যুবতীমনা কিশোর বেলার গানে

ঠোঁট ভিজেছে নারীর রাত্রিবাসের চিরকুট মৌতাতে

ভিজেছে কফির পেয়ালা ভরা, আলিঙ্গনসুধা

সপাটে উত্তুঙ্গ ঢেউ ভাঙা খেলায়

নষ্টনীড়ের পাঁজরেও সূর্যমুখী প্রেম

ভোরের অপেক্ষায় দিন গোনে

অন্যদিকে ভালোবাসার এক্কাদোক্কায়

পরাজিত সৈনিকদের স্মরণে স্মৃতিফলক জুড়ে

মোমবাতি মিছিলের মৌনতা

তবুও একাকীত্বের ঘরে মনের কংক্রিট শরীর

নিস্তব্ধতার পটে কবিতায় কাব্য হারায়

গ্যালাক্সি জুড়ে শতশত পৃথিবীর অকাল প্রয়া

আমাদের নিষ্প্রদীপ সংলাপে ভোরের যুথিকা

তবে আর কে ফোটাবে?

(০৯/০৯/১৩)

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন