অধোবদন

 

অধোবদন

 

খুচরো পয়সার মতো পড়ে রয়েছে

দেখলাম, ভক্তের অঞ্জলি

দেবতার নৈবেদ্যের থালায়

 

আমার সাথে এইসব দৃশ্য

দেখছিলেন, সেই তিনিও

অভ্যস্থ চোখের অভ্যাসে

 

পরস্পর চোখাচোখি হলো

দৃষ্টি বিনিময়, মনে হলো

তিনিও অসহায় বড়ো

 

কার্য এবং কারণ, ওদিকে

উদ্দেশ্য ও বিধেয়, সব

সবই কি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয়?

 

তিনিও জানেন বোধহয়

ঠুঁটো জগন্নাথ কিংবা শিবনেত্র

গাঁজায় দম দেওয়াটাই দস্তুর

 

সেসময়, আমিও ঘুরলাম

উল্টো দিকে, যে দিকে

মুখ লুকিয়ে তিনিও…

 

৭ই অক্টোবর ২০২৩

 

 

 

অহল্যা পর্ব

 

অহল্যা পর্ব

 

কত দিন কত বই বন্ধ মালটে বন্দি

দিনের আলো রাতের অন্ধকার সম

ঘুমিয়ে রয়েছে ভিতরে ভিতরে

 

শব্দ অক্ষর বাক্যের বিন্যাসে

যত কথা নীরব অপেক্ষায়

অহল্যার মতো পাষাণ হৃদয়ে

 

তেমনই এক পা দুই পা, এই আমি

হেঁটে বেড়াই তিন পা দূরত্ব জুড়ে

তুমি রয়ে গেলে তবু কত দূরে

 

আয়ুর কলস কেবলই খালি হয়

আর আমি শূন্য থেকে আরও

গভীর, গভীরতর শূন্যে শূন্যময়

 

তেমনই অনাদী অনন্ত সেই তিনি

তিনিও অহল্যার মতোন রয়েছেন

অপেক্ষায় বসে ভিতরে ভিতরে

 

একটু প্রেমের স্পর্শ, নিবিড় ছোঁয়া

বসন্তের বাতাসের মতো নরম

ভালবাসা আদরের আনন্দ স্বপ্নে!

 

৬ই অক্টোবর ২০২৩

 

গন্ধ সমাচার

 

গন্ধ সমাচার

 

পচাগলা শবের গন্ধ আসে

গন্ধ আসে ধ্বংসস্তুপের তলা থেকে

 

গন্ধ আসে বাতাসে পোড়া মাংসের

গন্ধ আসে বারুদ পোড়া আগ্রাসনের

 

গন্ধ আসে ঠুঁটো জগন্নাথদের ঘামের

গন্ধ আসে রাষ্ট্রপুঞ্জের হিমঘর থেকে

 

গন্ধ আসে হায়নার হাসির,

গন্ধ আসে ওয়ার ক্যাবিনেট থেকে

 

গন্ধ আসে অনাথ শিশুর কান্নার

গন্ধ আসে সন্তানহারা জননীর

 

গন্ধ আসে তছনছ হওয়া স্বপ্নের

গন্ধ আসে যুবক যুবতীর লাশের

 

গন্ধ আসে চক্রব্যূহে আটক অভিমন্যুর

গন্ধ আসে শান্তিচুক্তির অট্টহাস্যের

 

গন্ধ আসে গন্ধ আসে গন্ধ আসে দুর্গন্ধের

গন্ধ আসে চক্রান্তের আঁতুরঘর থেকে

 

গন্ধ আসে বোমা বারুদ কামানের থেকে

গন্ধ আসে যুদ্ধ জাহাজ ট্যাঙ্ক মিসাইল থেকে

 

গন্ধ আসে নীরব দর্শকের নীরবতা থেকে

গন্ধ আসে দূরত্বে থাকার কৌশল থেকে

 

গন্ধ আসে ছল চাতুরী শয়তানী থেকে

গন্ধ আসে আমরা-ওরা বৈষম্য বিভেদ থেকে

 

গন্ধ আসে গন্ধ আসে গন্ধ আসে সন্ত্রাসের

গন্ধ আসে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রাণভোমরা থেকে

 

২৬শে অক্টোবর ২০২৩

 

 

গল্পগাথা

 

গল্পগাথা

 

স্বপ্নের গলা জড়িয়ে শুয়ে থাকি

মধ্যরাতের অভিশাপ নিয়ে

মুহুর্তের গল্পগাথা রূপকথার মতো

কিংবদন্তীর হয়ে উঠতে পারে

 

আশেপাশে কেউ নেই যদিও এখন

চারপাশ ফাঁকা থাকে কালের নিয়মে

এদিকে চিন্তার ভাঁজে ভাঁজে

অনন্ত ফাঁক ফোকর আবহমানের

 

করোটি জুড়ে ইতিহাসের মারপ্যাঁচ

গন্ধমদন বোঝায় শিরদাঁড়া বেঁকে যায়

বুকের ভিতর, সময় সময় কারা যেন

কড়া নাড়ে গভীর তর্জনে তর্জনী উঁচিয়ে

 

আমি জানি, তারপর সন্ধ্যা ফুরিয়ে এলে

পায়ে পায়ে বারবনিতার ঘরে ভিড় বাড়ে

জনপদ জুড়ে খালি বোতল গড়াগড়ি খায়

মুখোমুখি টেবিলে পরস্পর বন্ধকি মাথা নিয়ে

 

আমি তাই স্বপ্নের গলা জড়িয়ে শুয়ে

মধ্যরাতের অভিশাপ অজগরের মতো

গ্রাস করে নেয়, সংকল্প সাধনা সব

রূপকথা নয় কিংবদন্তীও নয়, গল্পের মত‌ন

 

২৮শে অক্টো‌বর ২০২৩

 

 

 

ছন্দপতনের শব্দ

 

ছন্দপতনের শব্দ

 

 

বাজে কাগজের ঝুড়িতে

অনেক কবিতা জমেছে

দলা পাকানো অক্ষর

টুকরো টুকরো যতিচিহ্ন

বিবস্ত্র স্মৃতিচিহ্নের মতোন

 

 

মিছিল ফিরে গিয়েছে অনেক্ষণ

স্লোগান ফেস্টুন ব্যানার পোস্টার

জড়ভরত হতবুদ্ধি কিংকর্তব্যবিমূঢ়

ইতিহাস পাতা ওল্টায় রোজ

ভাতের থালায় অজীর্ণ অম্বলে

 

 

রামায়ণ থেকে মহাভারত

যুদ্ধ প্রেম বংশরক্ষায়

শত্রু মিত্র অংশীদারী

পাপ কিংবা পূণ্য কতটুকু

যতটুকু স্বার্থ মোহ লোভ

 

 

ওদিকে মহাকালের পথে

স্বয়ং তিনি, ব্যর্থ কবি’র মতোন

ছন্দপতনের শব্দে দিশাহারা

অব্যর্থ শব্দ নয়, শব্দের কঙ্কালে

তবুও কবিতা লেখার প্রয়াস

 

৬ই অক্টোবর ২০২৩

দুঃস্বপ্ন

 

দুঃস্বপ্ন

 

সত্যিই যদি ডাকেন

বসন্তের ক‌োকিলের মতো একান্তে

কাশফুলের আনন্দের মতো

দিগন্তপ্লাবী উৎসবে

সত্যিই যদি ডাকেন

বুকের ওমে, ভালবেসে

 

এই পৃথিবীর জতুগৃহ ছেড়ে

ভোটার লাইনের চক্রব্যূহ ছেড়ে

আশা ভরসা স্বপ্নের খুড়োর-কল

লড়াইয়ের ময়দানে ফেলে রেখে দিয়ে

জানি না সঠিক, পারবো কি’না

ছুটে যেতে একছুটে, সবকিছু ফেলে

 

পায়ে পায়ে জড়িয়ে আসে

লতাগুল্মের মতো পিছুটান

পূর্বপুরুষের কৃতকর্ম

লোভ লালসা কামনা, অভিশাপ

তবু, সত্যিই যদি ডাকেন

বেকুবের মতো এরপরেও…

 

২৪শে অক্টোবর ২০২৩

প্রার্থনা

 

প্রার্থনা

 

আরও কিছুদিন কিছুটা বেশি সময়

বেঁচে থাকি বরং আলো বাতাসে

তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি না

 

সমস্ত রাত ধরে স্বপ্ন দেখি আবারো

বাঘনখ বল্লম থেকে রক্ত ধুয়ে যাক

তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি না

 

ভোরের আলোয় চারপাশে আলো হয়ে

ফুটে উঠুক গৌতম যীশু চৈতন্য

তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি না

 

সকল নশ্বরতার ভিতরে শাশ্বত ভালবাসা

স্থায়ী হোক, দূর হোক অবজ্ঞা অবহেলা

তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি না

 

শয়তানের কারখানাগুলি ধ্বংস হোক

জন্ম হোক ঘরে ঘরে লেলিন চে গুয়েভারা

তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি না

 

আরও কিছুদিন কিছুটা বেশি সময়

আদর দিয়ে যাই বরং নিঃস্বার্থ আনন্দে

তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি না

 

এই আলো বাতাস মাটির আশ্রয়ে

আমরা বরং পরস্পর যূথবদ্ধ থাকি

তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি না

 

মাঝে মাঝে মনে হয় ইতিহাস পাল্টে দিই

কেন এই বসে থাকা নিজের কাছে একা?

তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি না

 

২৫শে অক্টোবর ২০২৩

 

 

প্রেমিক

 

প্রেমিক

 

আপনি কি ঈশ্বরের দেখা পেয়েছেন?

জিজ্ঞাসা করেছিলাম,

এক ভক্তকে

চিনতে পেরেছিলেন তিনি

আপনাকে?

আত্মজ বলে?

পাশে টেনে বসিয়ে?

 

একজন অবিশ্বাসীর সাথে

হঠাৎ দেখা

মন্দিরে নয় মসজিদে নয়,

গোরস্থানে।

জানলেন কি করে আপনি!

তিনি নেই?

মৃত্যুর মতো অমোঘ সত্যই কি

শেষ কথা?

 

বন্ধ দরজার মতো চোখ বুঁজে,

দুজনেই

দেওয়ালের মতো বোবা দৃষ্টিতে

নির্বাক

এক পৃথিবী মানুষ,

কেউই দেখেনি তাঁকে

কেউই জানে না

তিনি আছেন না নেই

 

তবু এই আকাশ বাতাস আলো

আর জল

এই পৃথিবীর মুখে বার বার

চুমু খেয়ে

মাটি আর মাটির গভীরে,

আরও বেশি আনন্দ সৃজনে উন্মনে,

প্রশ্ন নয় বিতর্ক নয় কোন

 

আমিও তেমনি কারুর,

প্রেমে পড়বো বলে

মানুষের মুখে মুখ রেখে

বারবার ঠকেছি

এত আদর এত ভালবাসা

এত সময় এমন নিরুদ্বিগ্ন প্রেম

হয়তো মানুষের জন্য নয়

 

২৯শে অক্টোবর ২০২৩

 

 

 

 

 

 

 

ভাঁড়

 

ভাঁড়

 

মহেঞ্জোদরোর অন্ধকার নিয়ে

চুপচাপ বসে রয়েছি

তৃষ্ণার জলেও বিষপানের জ্বালা

 

মান্ধাতার বাবার আমলের ছায়ারা

আবারো ঘুরে ফিরে, ফিরে আসে

মুখ আয়নায় তাদের ছায়াপাত পড়ে

 

চিতাগ্নির মতো পোড়া দৃশ্যের ক্ষত

তবুও সুস্থ চোখে নিরুত্তাপ আলো

আবহমান ভাঁড়েদের মতো আলোকিত

 

গভীর স্তব্ধতা নিয়ে বোধিবৃক্ষের বেদী

স্থির নেত্রে বোধহয় কাউকে খোঁজে

গৃহদাহের উন্মত্ত আলোর উচ্ছ্বাসে

 

আমিও কি বেহালা বাজাই নিজে?

 

২৮শে অক্টোবর ২০২৩

 

 

 

স্বভাবের দোষে

 

স্বভাবের দোষে

 

ডাকিনি আপনাকে কোনদিন

কোন অবকাশে

 

প্রাণ ভরে নিশ্বাসে প্রশ্বাসে

বিশ্বাসে ভরসায়

 

কোন অমোঘ কারণে হয়তো বা নয়

হয়তো খেয়ালেরই বশে

 

যতদূর চোখ যায়,

পাখির ডানার মতো

স্বপ্নের মায়াময় উৎসবে

 

ততদূর দেখা যায়

মানুষের হাতে নিহত মানুষ

ছায়া হয়ে মিশে যায় ছায়ায়

 

আমি তাই তফাতেই

সকলের পিছনে সকলের শেষে

বোবার মতো কেঁদেছি নীরবে

 

ডাকিনি আপনাকে কোনদিন

কোন অবকাশে

 

যুদ্ধ মারী সন্ত্রাসে, অভুক্তের

মুখের গ্রাসে, দুর্ভাবনায়

 

কোন অমোঘ কারণে হয়তো বা নয়

হয়তো স্বভাবেরই দোষে

 

যতদূর হাঁটা যায়

সক্রেটিস যীশু চৈতন্যের মতো

মানবিক স্নায়বিক কলরবে

 

ততদূর জানা যায়

মানুষের ফাঁদে আটকিয়ে মানুষ

কুরুক্ষেত্র নাগাসাকি হিরোশিমায়

 

আমি তাই তফাতেই

সকলের পিছনে সকলের শেষে

বরাবর থেকেছি নীরবে

 

২৩শে অক্টোবর ২০২৩

                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                        

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন