বিপর্যয়

 

 

বিপর্যয়

 

বেশ কিছু দিন হলো শব্দরা আসছে না আর

আগের মতো। সময়ের কোলাহল ছাপিয়ে

জোয়ারের উজান বেয়ে সাঁতরিয়ে

 

মনে হয় মাঝেরহাট সেতুর মতো

দুটুকরো কলমে শব্দরা আহত নিহত

দিকভ্রান্ত হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খায়

 

তাই কবিতার ছুটি আপাতত

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে

আঙুলের নাচন শুরু হয় কিন্থু ঐ!

 

শব্দরা কোথায়? আমার আশে পাশে

যুক্তিতর্ক প্রতিশ্রুতির রুটমার্চ: তবু

ল্যাম্পপোস্ট জুড়ে আরও অন্ধকার ঘনায়

 

২৯শে ভাদ্র

বিবর্ণ হেমন্তের কথায়

 

বিবর্ণ হেমন্তের কথায়

 

সহজে ভোলার মতোই তোমাকে ভুলেছিলাম একদিন

সহজে পাওয়ার মতো প্রেম সহজে টেঁকে না জেনে

তারপর হেমন্তের ক্লান্তির পথে হেঁটে গড়িয়ে

                        এই এতটা বছর!

সামুদ্রিক পাখির মতো তোমাকে দেখলাম

আবারো হেমন্তের নিস্তব্ধ সন্ধ্যার শেষে

দুচোখ ভরে মানুষের ঘরবাড়ি দেখছিলে বুঝি

                        খোঁজনি কিছু আর

অবিশ্রাম মানুষের ভিড়ে প্রতিদিন

রাত্রি নামলেও তুমি নির্বিকার

হেমন্ত পাতা ঝড়িয়ে চলে যাবে জেনে……..

বিরহ

 

 

 

বিরহ

 

সেইসব শরীরঘটিত গোপনাঙ্গ সুখ

রাত্রি তৃতীয় প্রহরের জানলা দিয়ে

উঁকি দিলে, সবাই সকলেই কামুক

 

শরীরে শরীর মেলানো পয়ারের সুর

অন্ধকার ঘন হয়ে আসা বাতাসে

তখন আরও নিবিড় আরও মধুর

 

মনের জানলা ধরে জেগে থাকে রাত

রাতের আগুন পোড়ে, শরীরের ভাঁজে

দুটো হাত খুঁজে ফেরে আরও দুটি হাত

 

বিলাপ

 

 

বিলাপ

 

এ শরীরে তোমার ঠিকানা লেখা ছিল

অজানা ছিল না তোমারও

যে কোন ঠিকানাই গম্য হয় না

হয় নি তাই তোমারও

 

তবু ভোর হতে সদর দরজায় কান পাতি

নরম ঠকঠক শব্দের অপেক্ষায় কোনো

নাগরিক রোদ ঘেমে নেয়ে ওঠে

দরজার ওপারে শব্দ হয় না কোনো

 

বিছানা জুড়ে আরধ্য রাত নামে

শরীরের আনাচে কানাচে তুমি

চিত্রনাট্য সংলাপে এখন এডাল্ট সময়

যে স্বপ্ন কখনো দেখনি তুমি

 

৩০শে কার্তিক’ ১৪২৫

বিসর্জন

 

                                  

বিসর্জন

 

নিজস্ব স্বাক্ষরে অক্ষর গুঁজে গুঁজে

বিশ্বাসের বিসর্জনে পা মিলিয়ে চলেছি

নবমীর চাঁদের বাঁশি সুরে সুরে

অশ্রুসজল পথে পিছু নিয়ে ছিল পথিকের

 

আরক্ত মুখোশের বিভা

অন্তিম প্রয়াসে শিলান্যাসের মতো

প্রতিশ্রুতির লিমেরিক শোনাতে

জলপরীনৃত্যের আয়োজনে ব্যস্ত

 

ঠিক এমন সময় পর্দার উন্মোচন

সুজাতার পরমান্ন হাতে তুমি

দাঁড়ালে সম্মুখে। হাজার বছর

অতীত হয়ে গেলেও আজ বিসর্জন

 

২২শে আশ্বিন’ ১৪২৬

বুদ্ধ কনফুসিয়াস

 

 

বুদ্ধ কনফুসিয়াস

 

অন্ধকার আকাশনারীর মতো আজকের রাত

গৃহস্থের জানলায় আড়ি পেতে দাঁড়িয়ে

কিছুটা বিপর্যস্ত; হাইরোডে দুরন্ত ট্রাকের শব্দ

তাড়া আছে পৌঁছাবার। তবুও শূন্য প্রান্তর

ঠিকানার খৌঁজে সারাদিন-

আর রাতের অন্ধকার আমাদের দুচোখ বেয়ে

টুপটাপ।

তবুও বুদ্ধ কনফুসিয়াস কিছুটা আলোর মন্ত্রণায়

অনেকটা হেঁটে নিয়ে ক্লান্ত

এলোমেলো কথাদের ভিড়ে একদিন হারিয়ে গেলেন

 

আমারও অনেকটা পথ হাঁটার ছিল

কিন্তু এই রাত

          অন্ধকারে আমাদের সব পথ

          বাঁধিয়ে দিয়ে চলে যায়

          চোখ ধাঁধানো স্থবির সকালটুকু

পড়ে থাকে শুধু এলোমেলো  সান্ধ্য খবরে

 

 

বৃত্তায়ন

 

 

বৃত্তায়ন

 

শোন তবে একটা গল্পই বলি আজ

না সেই রাজা ও রানীর গল্প নয়

সোনার কাঠি ছোঁয়ানো

রাজপুত্র রাজকন্যারও নয়

নাটক সিনেমার

নায়ক নায়িকার গল্পও তো অনেক হল

তাই সে সব কিছু নয়

তবে চার হাতপায়ের

আলোছায়ার পথে

নড়াচড়ার কথা ও কাহিনী বলতে পারো

 

এই তো গেল বুধবার

আবার সেই একপ্রস্থ বিবাদ বিসংবাদ

না মুখোমুখি মুখোভঙ্গির

বিচিত্র সিলেবাসে নয়

মুঠোফনের দুই প্রান্তিক পারিসরে

দৃশ্যের আড়ালে

দৃশ্যের জন্ম দেওয়া

বার বার দেখা সিনেমার মতো

তবু সিনেমার মতো নয়

 

ক্যালেণ্ডার জুড়ে

সংশয়ের ধিকি ধিকি নৃত্য

সিকি ভাগ অভিমান

আর বাকিটা ক্ষোভের অগ্ন্যপাত

ঠিকানা হারানো পথের  বিলাপের মত

এসবই গা সওয়া অভিজ্ঞতা

মুঠোফোনের উভয় প্রান্তিক বিন্যাসেই

সরলরেখার মতো ভবিতব্য

তবু চলতেই থাকে দঁড়ি টানাটানি

 

আমাদের ভাষা তবু বরাভয় দেয় ভালোবাসার

চার হাতপায়ের নড়াচড়ার ছন্দ থেকে ছন্দপতন

রোজকার অভ্যাস থেকে অভ্যস্থ শৃঙ্খল

যাবতীয় হিসাব নিকাশ হিসাবের বেনিয়ম

বৃত্তের মতো বৃত্তের ভিতর ঘুরতে থাকে অবিরাম

 

বৃষ্টিদিনের কাব্য

 


বৃষ্টিদিনের কাব্য

 

তোমরা যারা বৃষ্টিদিনে

ছন্দ দিয়ে শব্দ ধর

জলের ফোঁটায় মনের বোঁটায়

তাতা থৈথৈ কাব্যি কর

 

আচ্ছা ধর, সেই তখনি

পড়তো যদি তোমার ঘরে

বৃষ্টিফোঁটা টপটপাটপ

সিলিং চুঁইয়ে এঘর ওঘর

 

ভিজত যদি লেখার টেবিল

শোয়ার তোষক কাব্যখাতা

কলম ছেড়ে সেই তো তুমি

গলদঘর্ম বুলিয়ে ন্যাতা

 

গামলা বাটি সানকি নিয়ে

বৃষ্টিধারা দিচ্ছ সামাল

ভাসছে মেঝে ভিজছ তুমি

পুড়ছে যখন তোমার কপাল

 

তখন তোমার শব্দ দিয়ে

ছন্দ তালে কাব্যি করা

কিংবা ধর ব্যালকোনিতে

সেল্ফি ভরে বৃষ্টি ধরা

 

লগইন করে ফেসের পাতায়

লাইক কমেন্ট খেড়োর খাতায়

হাহতস্মি কোথায় তুমি?

আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি যখন‌

 

তোমার ঘরেই অনাহুত

তখন কবি বলতে পারো

বৃষ্টিদিনে কাব্যি করে

কেমন করে ওয়াল ভরো?

 

৯ই শ্রাবণ ১৪২৫

 

 

 

বেওয়ারিশ লাশ

 


বেওয়ারিশ লাশ

 

গোপনাঙ্গের অস্থির অস্থিতে

ধরে রেখেছি শেষ নাভিশ্বাস

মন আর মননের কবরের নীচে

ঋতু ও রতির সঙ্গম শেষে

পড়ে ছিল বেওয়ারিশ দুটি লাশ

 

ঐতিহাসিকের হাতে ইতিহাস

হয়তো বা বেআব্রু হতে পারে

রাজকবির প্রশস্তি গাথা জুড়ে

দেখে রেখেছি মুর্খদের কোলাহল

ঢেঁড়া পিটিয়ে জনসভা করে

 

রাত্রির অন্ধকারে নির্লিপ্ত জ্যোৎস্নায়

মাউস আবারো হয়তো বা পথ হারাবে

এ সময় কি তবে ইতিহাস জুড়ে‌

প্রতিটি সঙ্গম শেষে প্রতি বার

বেওয়ারিশ লাশের জন্ম দিয়ে যাবে?

 

১৫ই শ্রাবণ’ ১৪২৭

 

বেকুবের মেনিফেস্টো

 

বেকুবের মেনিফেস্টো

 

আমিও কি হাঁটছি বেকুবের মতো

পকেটে গড়ের মাঠ

শূন্য আঙুলে বিষাদ মাখা স্বপ্ন

প্ল্যাকার্ডে মিছিলে মরীচিকার পাঠ

 

ক্লান্ত পায়ের পাতা অক্লান্ত অন্বেষণ

সময়ের চাবুকে বদলে দিতে দিন

নিতান্ত খড়কুটো ধরেও যদি হয়

হয়ে যাক বিপ্লব রঙিন

 

ময়লা পেরেকে টাঙানো আয়নায়

বিকারের ঘোর তবুও দুই চোখ

অনাগত শিশুর হাসির মতো, নয়তো

জননীর স্পর্শের মতো অম্লান হোক

 

১৭ই ফাল্গুন’ ১৪২৫

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন